প্রতিষেধক বলতে আমরা সাধারণত বুঝি কোন জীবাণুকে নিষ্ক্রিয় অথবা অর্ধ-নিষ্ক্রিয় করে মানবদেহে প্রবেশ করানো। এতে মানবদেহে কোন সংক্রমণ না হলেও মানবদেহে ওই জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠে। পরবর্তীতে আসল জীবাণু আক্রমণ করলেও মানবদেহ আগে থেকেই প্রস্তুত থাকে যাতে ওই জীবাণু কোন সংক্রমণ করতে না পারে।
সাধারণত প্রতিষেধক তৈরি করা হয় অনুজীবের মধ্যে যেখানে ফারমেন্টেশন এবং শোধনের মত বেশ ব্যয়বহুল কিছু ধাপ রয়েছে। কেননা এই দুটি ধাপের জন্যে প্রয়োজন দক্ষ জনবল, বিশেষ যন্ত্র এবং অনুকূল পরিবেশ। চিন্তা করুন তো যদি এমন হয় প্রতিষেধক তৈরির জন্য কোন বিশেষ যন্ত্র লাগবে না, লাগবে না প্রস্তুত পরবর্তী কোন বিশেষ ব্যবস্থা তাহলে প্রতিষেধকের উৎপাদন খরচ কতটা কমে আসবে! একটু চিন্তা করুন তো এমন কী ব্যবস্থা আছে ?
উদ্ভিদ! হ্যাঁ, উদ্ভিদ! বিশাল বড় বড় ফার্মেন্টারের বদলে অতি কম খরচে উদ্ভিদেই তৈরি করা সম্ভব প্রতিষেধক। এমনকি নেই প্রস্তুত পরবর্তী কোন ঝামেলা! ধরুন আপনার বার্গারের লেটুসের মধ্যেই রয়েছে আপনার প্রতিষেধক। এমনটা হলে নিশ্চয়ই মন্দ হয় না, অন্তত সুঁইয়ের খোঁচা থেকে তো বাঁচা যাবে।
এই বৈপ্লবিক ধারণা নিয়ে আসেন জর্জ লমনোসফ ১৯৯০ সালের দিকে যিনি যুক্তরাজ্যের John Innes Center এর একজন বিজ্ঞানী। শুরুতে বিষয়টি নিয়ে অনেক হাসাহাসি হলেও এখন সবাই এর মর্ম বুঝতে পারছে। সমগ্র বিষয়টি খুবই সোজাসাপ্টা। যে ভাইরাস বা জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিষেধক তৈরি করা হবে তার কিছু জিন (যেগুলো কাঠামো গঠনের জন্য জরুরী কিন্তু রোগ ঘটাতে অক্ষম) উদ্ভিদে প্রবেশ করানো। এরপর বাকি কাজ উদ্ভিদ তার নিজের মত করে নিবে। সেই জিন থেকে উদ্ভিদকোষে তৈরি হবে প্রোটিন, যে প্রোটিন দেখতে হবে কাঙ্ক্ষিত জীবাণুর মত কিন্ত তা রোগ সৃষ্টি করতে অক্ষম।
এই পদ্ধতিতে তৈরি করা প্রতিষেধকের আছে অনেক সুবিধাঃ
উৎপাদন খরচ অনেক কম।
উদ্ভিদকোষের অভ্যন্তরে তৈরি হচ্ছে বিধায় কোষপ্রাচীরে আবৃত থাকে, সহজে প্রতিষেধক নষ্ট হবে
না।
অল্প সময়ে অধিক পরিমানে প্রতিষেধক তৈরি করা সম্ভব।
মুখ দিয়ে খাওয়া সম্ভব, টিকার প্রয়োজন নেই।
একই উদ্ভিদে একাধিক জীবাণুর প্রতিষেধক তৈরি করা সম্ভব।
তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে নতুন জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিষেধক তৈরি করা সম্ভব যেখানে সাধারণ
পদ্ধতিতে তৈরি করতে কয়েক বছর সময় লাগে।
পশ্চিম আফ্রিকাতে যখন এবোলা ভাইরাসের মারাত্মক সংক্রমণ ঘটে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভিদে এবোলা এর প্রতিষেধক তৈরি করা হয় যার বাণিজ্যিক নাম ZMapp এবং কিছু এবোলা আক্রান্ত রোগী এর মাধ্যমে তাদের জীবন ফিরে পান। ডঃ বেন্ট ব্র্যান্টলি এদের মধ্যে একজন।
সারা পৃথিবীতে বর্তমানে উদ্ভিদে প্রতিষেধক তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন মারাত্মক রোগ, যেমন ক্যান্সারের ওষুধ তৈরিরও কাজ চলছে।
References & Other Links
- https://youtu.be/kkAb2WB17l4
- Chan & Daniell, 2014 Plant Biotechnology Journal 13:1056-1070
- Moussavou et al, 2015 BioMed Research International ID: 306164
- Sack et al, 2015 Current Opinion in Biotechnology 32:163-170
Written by
Mahmood Hasan Kallol, Ph.D Researcher, University of Miami, USA
Best safe and secure cloud storage with password protection
Get Envato Elements, Prime Video, Hotstar and Netflix For Free