fbpx
ঐতিহাসিক কার্জনহল

কার্জন হলের রত্নরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, এই নামটার সাথে জড়িয়ে আছে না বলা অনেক স্মৃতি। যখনই ঢাকা শহরের এই যন্ত্রচালিত জীবন অসহ্য মনে হয়, অসহ্য মনে হয় যানযট, সবুজের জন্য খাঁ খাঁ করে মন তখনই এই কার্জনহলে এসে নিজেকে তৃপ্ত মনে হয়। যারা ক্যাম্পাসে সারাদিনই ক্লাস, ল্যাব, মিড, প্রেজেন্টেশন নিয়ে দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তাদেরকে শেষ বিকেলের পর পাওয়া যায় এই কার্জনহলের মাঠে ঘাসের উপর একটু শান্তির খোঁজে।

মাঝে মাঝে তো দেখা যায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের যারা তাদের পরিবারের সাথে, ছেলে মেয়ের সাথে এসেছে কিছু স্মৃতি বিলিয়ে দিতে আবার বলা যায় কিছু অনুপ্রেরণার খোরাক জোগাতে।

যাইহোক, এই কার্জনহলের প্রধান আকর্ষণ হলো এখানে উপস্থিত সবুজেরা, তারাই এখানের সবচেয়ে বড় রত্ন তাদের টানে সবাই ছুটে আসে। আমার গত পোষ্টে বড় বড় গাছগুলোর একটা সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়েছিলাম। সেখানে বর্ণনাকৃত কিছু ফুলের গাছ যেমন দেবকাঞ্চন,রাধাচূড়া, কাঠগোলাপ, পানি জারুল, পলাশ, নাগেশ্বর, নাগলিংগম, কুরচি, কৃষ্ণচূড়া, বসন্ত মঞ্জরী, উদয়পদ্ম, হলদেচূড়া, মুসেন্দা, স্বর্ণচাঁপা, তুমা, সোনালু ইত্যাদি প্রসঙ্গে এখানে কিছু বললাম না। এই পোষ্টে শুধু ছোট উদ্ভিদ গুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে পরিচয় করিয়ে দিবো যাদের কেউ কেউ সব সময়ই কার্জনহলে উপস্থিত থাকে আবার কেউ গ্রীষ্মের তাপদাহে, কেউ বা ঝমঝমানো বর্ষায়, কেউ কুয়াশাজড়ানো শীতে, আবার কেউ বা পছন্দের বসন্তে আসে, এসে শোভাবর্ধক হয়ে কার্জন হলকে আরো উৎফুল্ল করে তুলে।

তাদের বর্ণনা দেয়ার পূর্বেই তাদের ছোট্ট একটা তালিকাঃ

1. বাগানবিলাস
2. রঙ্গন
3. গন্ধরাজ
4. নীলঘন্টা
5. দাদমর্দন
6. অড়হর
7. ধুতুরা
8. কলাবতী
9. মাধুরীলতা
10. কুন্দফুল
11. মর্নিং গ্লোরী
12. হলিহক
13. কসমস
14. রোজমস
15. এস্টার
16. ক্যালেন্ডুলা
17. জার্বেরা
18. ডায়েন্থাস
19. লুপিন
20. দোপাটি
21. পিটুনিয়া
22. ফ্লক্স
23. মোরগটুপি
24. গাঁদা
25. পপি
26. চন্দ্রমল্লিকা
27. ডালিয়া
28. কুমার বোতাম
29. গুল মখমল
30. নয়নতারা
31. কাঁটামুকুট
32. সুষমা
33. দুরন্ত
34. পেনটাস
35. স্যালভিয়া
36. নয়নতারা
37. জুঁই
38. মধু লনিসেরা
39. ব্লিডিং হার্ট
40. বাসরলতা
41. হলদেঘন্টা
42. উলটচন্ডাল
43. নীল মনিলতা
44. চেরী
45. টগর
46. জয়তী
47. রেইন লিলি
48. আমরুল
50. লালপাতা
51. ল্যান্টেনা
52. জবা
53. পার্পেল হার্ট

দোয়েলচত্বর দিয়ে কার্জনহলে প্রবেশ করার আগেই গেটের পাশে ছাউনী বানিয়ে যে ফুলের গাছটি আমাদেরকে ছায়া দিয়েই চলেছে সে হলো বাগান বিলাস, আমাদের গ্রামে আবার কাগজফুল নামে ভালো চিনে। লতানো উদ্ভিদ কিন্তু কান্ড শক্ত, বয়স হলে সহজে ভাঙ্গা যায় না।

বাগানবিলাস Bougainvillea spectabilis Willd.

 তারপর গেটে দাঁড়িয়ে দেখতে পাওয়া যায় পুরো কার্জনহলের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত চলে যাওয়া এক পিচঢালা রাস্তা। এই রাস্তার হাতের বামপাশে তাকালে দেখতে পাওয়া যায় গোল গোল ঝোপের মতো রঙ্গন ফুলের সারি যা একদম কার্জনহল মেন বিল্ডিংয়ের সামনে পর্যন্ত চলে গেছে।  বহুবর্ণ বিশিষ্ট এই গুচ্ছাকার ফুলগুলোর কোনো ঘ্রাণ না থাকলেও দেখতে খুব ভালো লাগে। তবে, সেখানে উপস্থিত সাদা বর্ণের যে রঙ্গন ফুলের গাছটা, সেটাতে আবার ঘ্রাণ আছে বলে তাকে সুগন্ধি রঙ্গন বলে ডাকা হয়।

রঙ্গন Ixora chinensis Lamk.
সুগন্ধি রঙ্গন Ixora pavetta   Andrews

রঙ্গনের এই সারির মাঝে মাঝে আবার গন্ধরাজের ঝোপও আছে। রঙ্গন আর এই গন্ধরাজ দুইজনই একই পরিবারের (Rubiaceae) হওয়ার অনেকেই এটা খেয়ালই করে না। তবে যখন গন্ধরাজের ফুল ফুলে তখন এর সুগন্ধে মেতে উঠে এর চারপাশের পরিবেশ, তখন একে চিনতে আর কেউ ভুল করে না।

গন্ধরাজ Gardenia augusta Merr. nom. illeg.

প্রকৃতিই বড় শিক্ষক, তার কাছে অনেক কিছু শিখার আছে। এর একটা উদাহরন হিসেবে বলা যায় মাঝে দেখা নীলঘন্টার কথা। এর ফুলে হলুদ আর বেগুনী বর্ণ যেভাবে একে অপরের সাথে মিশে আছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। নিজ চোখে না দেখলে বলে বুঝানো কষ্ট সাধ্য বিষয় ।

নীলঘন্টা Thunbergia erecta  (Benth.) T.Anderson

তার পাশে দেখা যায় কলাবতী। কলাবতী দেখতে কেনো যেনো ভালো লাগে জানি না। ভালোই লাগে এই লাল, কমলা, হলুদ, সাথে সাথে একে অপরের সাথে মিশ্রিত ছোপ ছোপ, ছোট বড়। তবে একটা কথা জেনে আশ্চর্য হবেন যে এই রঙ বেরঙের ফুল গুলো আসলে ফুল না, এই গুলো মডিফাইড এন্থার। ফুল ভিতরে থাকে যা আমাদের নজরে পড়ে না।

কলাবতী Canna indica L.

তার পরে দেয়াল ঘেষে আছে রাধাচূড়া আর পানিজারুল। এদের মাঝে আছে সুন্দর হলুদ বিশিষ্ট বহু গুনের অধিকারী এক ভেষজ উদ্ভিদ দাদমর্দনের। নাম শুনেও কিছুটা অনুমান করা যায় এই উদ্ভিদের উপকারীতা কি হতে পারে। এটি দাদের  জন্য খুবই কার্যকরী।

দাদমর্দন Senna alata (L.) Roxb.

এর পরের দেখা গাছটার নাম একটু হড়মড়ে ধরনের হলেও গ্রামে গঞ্জে বেশ পরিচিত, নাম অড়হর। এর ডাল, শাক অনেকেই খেয়েছেন বলে আশা রাখি যদিও দিন দিন এর পরিমান কমে যাচ্ছে।

অড়হর Cajanus cajan  (L.) Millsp

সেখানে  আবার এক বহু শাখা প্রশাখা নিয়ে বড় ধরনের কালো ধুতুরা গাছ আছে। প্রায় সময়ই তার ফুলগুলো ফুটে থাকতে দেখতে পাওয়া যায়। ভালোই লাগে ফুলে ফুলে ভরা এই দৃশ্য।

ধুতুরা Datura metel var. fastuosa (L.) Saff.

তারপাশেই বিশাল এক গগন শিরিষ গাছ যার সাথে ঝুলে আছে রং বেরং এর ফুলের মাধুরীলতা বা মধুমঞ্জরী। ছোট বেলায় এর ফুলের ঘ্রাণে ছুটে চলেছি আর ফুল থেকে কতই না মধু খেয়েছি।

মাধুরীলতা Combretum indicum (L.) DeFilipps

এতক্ষণ শুধু বাম পাশই দেখলাম, এবার একটু রাস্তার ডান দিকেও দেখি কি আছে।

ডান দিকে তাকালেই EEE ডিপার্টমেন্টের একটা বিশাল গেট চোখে পড়ে। সেই গেটের সামনেই আছে কুন্দ ফুল। একদম ঝাঁকে ঝাঁকে ফুলগুলো ফুটে থাকলে মনে হয় যেনো প্রতেকটা লতা একেকটা ফুলের মালা। তাই হয়ত গানে গানে শুনতে পাওয়া যায় কুন্দ ফুলের মালা।

কুন্দ Jasminum multiflorum (Burm. f.) Andr.

তবে ইদানিং নতুন সংযোজন হিসেবে মর্নিংগ্লোরীও এর পাশে দেখা যায়। সকাল বেলায় এই ফুল সম্পূর্ণ ফুটে থাকে আর ধীরে ধীরে সময় অতিবাহিত সাথে সাথে এই ফুলও চুপসে যেতে থাকে বলেই এর এই নাম।

মর্নিং গ্লোরী Ipomoea purpurea  (L.) Roth

আরেকটু ওপাশে যে ফুলটি নজর কাড়ে তার নাম হলিহক। অনেকেই হয়ত প্রথম দেখায় জবা ফুল বলে ভুল করতে পারেন কিন্তু বাস্তবে এদের মাঝে আছে বিস্তর তফাৎ। আর আমার এর ফুলের যেটা খুব ভালো লাগে তা হলো এদের পুষ্পবিন্যাস। একের পর এক ফুল ফুটতেই থাকে আর মঞ্জরীদন্ড উপরের উঠতেই থাকে। এই ঘটনা খুবই দৃষ্টিনন্দন ।

হলিহক Alcea rosea  L.

এরপরেই চলে আসে কার্জনহল মেনবিল্ডিং যাকে কেন্দ্র করেই সাজানো হয় ফুলে ফুলে। সত্যি বলতে এখানেই পাওয়া যায় স্থায়ী আর অস্থায়ী/সিজনাল গাছপালাগুলো যারা কার্জনহল করে তুলে আরো  বৈচিত্র্যময়।

যাইহোক, হেঁটে যেতে যেতে শুরু হয় তাদের সাথে দেখা। প্রথমে চোখে পড়ে খুব পরিচিত কসমস। মাঝে। একই জায়গায় আবার বর্ষার কসমসও উপস্থিত থাকে।

বর্ষার কসমস Cosmos sulphureus Cav.
কসমস Cosmos bipinnatus Cav.

তারপর থাকে মাটির সাথে লেগে থাকা গোলাপফুলের মতো রোজমস। এর কান্ড দেখতে মসের মতো আর ফুলটা একদম গোলাপ ফুলের মতো তাই রোজমস। আমাদের দিকে আবার একে দূর্বাফুলি বলে।

রোজমস Portulaca grandiflora  Hook.

লুপিন এর বর্ণটা আমার নজর কাড়ে। আর এত সুন্দরভাবে এর ফুলগুলো একটা পুষ্পমঞ্জরীতে সজ্জিত থাকে যে কি বলবো।

লুপিন Lupinus versicolor Lindl.

তারপর পাওয়া যায় ডায়েন্থাস। এটির ফুলগুলোর এন্থার এমনভাবে ছড়িয়ে থাকে যেনো মনে হয় পুরোফুলই সে নিজের দখলে নিতে চাই আর পাপড়িগুলো যেভাবে থাকে যেনো তাদের ছুতে গেলেই কামড় দিবে এমন ভাব।

ডায়েন্থাস  Dianthus chinensis L.

তারপর করাতের মতো কিনারা বিশিষ্ট পাতার দোপাটি। এটি অর্নামেন্টাল হলেও উপকারী বেশকিছু গুন আছে বলে জানা যায়।

দোপাটি  Impatiens balsamina  L.

এরপর যার সাথে দেখা তার নাম মোরগটুপি। এর ফুলটা যা দেখতে, আহহ্। রক্তিম বর্ণ আর কেমন সুন্দরভাবে নিজেকে আঁকাবাকা করে রাখে।

মোরগটুপি  Celosia argentea var. cristata (L.) Kuntze

গাঁদা ফুল নিয়ে তেমন বলার কিছু নাই। গ্রামবাংলার সবচেয়ে কমন দুইটা ফুলের কথা বলতে গেলে এক হবে গোলাপ আর দুই গাঁদা যদিও এরা আমাদের দেশের নেটিভ না। এই পাতার রক্ত বন্ধ করার গুন সবার জানা। রক্তগাঁদাও প্রায় একই গুন সম্পন্ন।

গাঁদা  Tagetes erecta L.
রক্ত গাঁদা  Tagetes patula L.

এইসব ফুলের মাঝেই বেগুনী বর্ণের ঘন্টার মতো ফুল ফুটে উঠে। এই হাইব্রিড পিটুনিয়ার বিভিন্ন আকারের ফুল পাওয়া যায় যারা অনেক সুশ্রী দেখতে।

পিটুনিয়া Petunia hybrida Vilm.

ফ্লক্স ফুলের কথাটা বলে রাখি। এর ফুলগুলো দেখতে অনেকটাই নয়নতারা ফুলের মতোই। যারা ভালোভাবে না দেখবে তারা প্রথমেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাবে।

ফ্লক্স  Phlox drummondii  Hook.
নয়নতারা  Catharanthus roseus (L.) G.Don.

এইবারে দেখা মিলে সারি সারি ডালিয়ার। কিছুটা সূর্যমুখী ফুলের মতো দেখতে। এইগুলো গুচ্ছাকার ফুল আর এর ভিতরের যে ক্লাস্টার আছে সেগুলোতেই ছোট ছোট ফুল ফুটে উঠে। এদের দুই ধরনের পাপড়ি থাকে।

ডালিয়া  Dahlia pinnata Cav.

ও, ডালিয়ার পাশে পাশে আবার থোকায় থোকায় চন্দ্রমল্লিকাও পাওয়া যায়। সৌন্দর্যের দিক থেকে কেউ কারো চেয়ে কম না।

চন্দ্রমল্লিকা  Chrysanthemum × morifolium (Ramat.) Hemsl.

তারপর ছোট গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ এস্টার। এটিও দেখতে আগের ফুলগুলোর মতো। সব গুলোই একই পরিবারের বলে একই রকম দেখতে কিন্তু ঐ যে সুক্ষ্ণ কিছু পার্থক্য তো আছেই।

এস্টার Aster laevis Lindl.

সেই বেডের পাশের বেডে আছে ক্যালেন্ডুলা। এর পাতাগুলো পুরোপুরি সবুজ না আর একটু রোমস ধরনের তবে ফুলটা নজরকাড়া।

ক্যালেন্ডুলা Calendula officinalis Hohen.

 

আর সেখানে আছে টকটকে লাল বর্ণের জার্বেরা। একদম দেখতে অর্নামেন্টাল কৃত্রিম ফুলগুলোর মতো।

জার্বেরা Gerbera viridifolia (DC.) Sch.Bip.

কুমার বোতাম ফুলের নীলের যাদু দেখে অনেকেই হয়তো মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকেন। আমিও চেয়ে থাকি। তবে মাঝে মাঝে নীলের সাথে মাঝে মাঝে ছোপ ছোপ আরো কিছু বর্ণের দেখা যায়।

কুমার বোতাম  Centaurea cyanus L.

কিছু কিছু জায়গায় গুলমখমলও উপস্থিত থাকে। এরা হলো গোলগাল দেখতে আর একেকটা ফুলের মধ্যে আরো ছোট ছোট ফুল থাকে। দেখতে চাইলেই কত কি দেখা যায়।

গুলমখমল Gomphrena globosa L.

এইবছর থেকে অর্নামেন্টাল পপিও কার্জনহলের আশেপাশে দেখা যাচ্ছে। এই ফুলগুলোর কেমন যেনো মোহনীয় গুন আছে যা সবাইকে খুব আকর্ষণ করে। আর এর কুঁড়িগুলো যেভাবে বিচ্ছুর লেজের মতো আকার ধারণ করব সেটাও দেখতে ভালো লাগে।

পপি  Papaver rhoeas L.

ওহ,,,
লিখতে লিখতে হাঁপিয়ে উঠলাম তারপরেও যেনো শেষই হয় না। কার্জনহলকে ঘিরে কত রত্নই না আছে।

যাইহোক, সুষমাকে আবার আজ কাল পৌরশু নামেও ডাকা হয়। সুষমার বেশকিছু গোল গোল ঝোপের ন্যায় গাছ পুরো কার্জনহলের আনাচে কানাচে পাওয়া যায় । এর একই গাছে দুই তিন বর্ণের ফুল ফুটে সারা বছরই।

সুষমা  Brunfelsia latifolia (Pohl) Benth

কাঁটামুকুটের কাঁটা দেখে অনেকেই ক্যাকটাস বলে বসে কিন্তু বাস্তবে এটা ক্যাকটাস না। এর ফুলগুলোতেও আছে অনেক রহস্য। আপাতত রহস্যভেদের কাজটা আপনাদের উপরেই দিলাম।

কাঁটামুকুট Euphorbia milii Des Moul.

এখানে আসলেই যেটি আগে চোখে লাগে সেটি হলো সালভিয়া। এর একটি দন্ডের মতো পুষ্পমঞ্জরীতে ফুটে থাকা লাল ফুলগুলো যেনো অন্য রকম লাগে।

স্যালভিয়া Salvia splendens  Sellow ex J.A. Schultes

তারপাশেই ফুটে থাকা পেনটাস গুলো অনেকেই আবার রঙ্গন মনে করে ভুল করতে পারে। করলেই বা কি, তাদের শোভা ছড়ানোর কাজে কোনো বাধা নাই।

পেনটাস   Pentas lanceolata (Forssk.) Deflers

আর দুরন্তকে কেনো যেনো কাঁটামেহেদী বলে জানি না। তবে এর নীল-বেগুনী ফুলগুলো থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে যা দেখতে চমৎকার লাগে। আর হলুদ ছোট ছোট কমলালেবুর মতো ফলগুলো আহা,,

দুরন্ত  Duranta repens L.

মেন বিল্ডিংয়ের প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। এখান বিশাল একটা মেহগনি গাছ আর তারপরেই শুরু আমাদের বোটানিক্যাল গার্ডেন। এই মেহগনি গাছের নিচে বেড়ে উঠেছে বেশকিছু গাছ।

প্রথমেই একটা কংক্রিটের নোটিশ বোডের পাশে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে জুঁই ফুল। প্রথমে তো আমি বুঝতেই পারি নি এটাই সেটা। পরে ফুল ফুটলে বুঝতে পারি।

জুঁই Jasminum sambac (L.) Aiton.

আর তার নিচে মাটির ঘেষে বেড়ে উঠেছে মধু লনিসেরা। এর ফুলগুলো দারুন মজাদার কারণ টাটকা ফুলগুলো সাদা হলেও কিছুদিন পরে তা সোনালি বর্ণ ধারণ করে একসাথে থাকে।

মধু লনিসেরা  Lonicera japonica  Thunb.

এদের পাশেই আছে ব্লিডিং হার্ট। এই নামের কারণ হলো এর ফুলগুলো। দেখলে মনে হয় যেনো সাদা ফুলের ভিতর থেকে লাল রক্ত বের হয়ে আসে।

ব্লিডিং হার্ট   Clerodendrum thomsoniae  Balf.

আর মেহগনি গাছ বেয়ে উঠেছে বাসরলতা। এর ফুল পাতা সবই অনন্য। ফুলগুলো দেখে মনে হয় যেনো বাসর ঘরে বিছানায় যেমনভাবে কৃত্রিম ফুলের মালা বানানো হয় ঠিক তেমনি। আর পাতা গুলো কেমন যেনো শক্ত, কুড়মুড়ে।

বাসরলতা  Thunbergia coccinea Wall.

হলদেঘন্টাকে আবার চন্দ্রপ্রভা নামেও অনেকে চিনে। নাম যাইহোক না কেনো জিনিস তো একটাই। এইজন্যই তো বৈজ্ঞানিক নামটা প্রচলিত যেনো এক জীবের এক নামই হয়, চিনতে অসুবিধা না হয়।
হলদেঘন্টা

হলদেঘন্টা Tecoma stans Juss.

তারপাশে অগ্নিশিখার মতো ফুটে থাকে উলটচন্ডাল। আগে অনেক পাওয়া গেলেও বর্তমানে উলটচন্ডালের পরিমান দিন দিন কমে যাচ্ছে এমনকি এখন এটি হুমকির সম্মুখীন। উপকারী বলে সবাই অতিরিক্ত ব্যবহার করেই চলেছে। আমাদের গার্ডেনের সামনে ঝোপগুলোতে বর্ষার সময় এর দেখা পাওয়া যায়।

উলটচন্ডাল Gloriosa superba L.

এইবার একটু কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের দিকে চোখ মেলে দেখা যাক। এই দিকে তাকালেই প্রথমে চোখে পড়ে  নীল মনিলতা। একটি লোহার লম্বা পিলার বেয়ে উঠে আছে এটি আর নীল বর্ণের ফুলের সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে।

নীল মনিলতা Petrea volubilis L.

এর নিচেই আছে ছোট জারুল। যদিও এটি প্রকৃত চেরী নয় তবুও আবার অনেকেই চেরী বলে ডাকে। এর ফুলগুলো খুব ঘনভাবে আর গুচ্ছাকারে থাকে। ফুটে থাকলে ভালোই লাগে।

চেরী Lagerstroemia indica L.

কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের চারপাশে পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রজাতির রেইন লিলি। বর্ষায় যখন সবাই দলবেধে উপস্থিত হয় এদের সাথে সৌন্দর্যে পাল্লা দেবার মতো কেউ নাই।

গোলাপি রেইন লিলি Zephyranthes rosea   Lindl.
হলুদ রেইন লিলি Zephyranthes citrina   Baker
সাদা রেইন লিলি Zephyranthes candida   (Lindl.) Herb.

তার পাশেই আছে টগর। এর ফুলগুলো দেখে মনে হয় যেনো সাইকেলের চাকা যেনো সামনের দিকে ধাবমান।

টগর Tabernaemontana divaricata (L.) R.Br. ex Roem. & Schult.

তার পাশেই রাস্তা ঐপাশে আছে জয়তী। এর ফুল সারাবছরই থাকে বলে চিনতে কোনো অসুবিধা হয় না। তবে পেপের মতো পাতাও চেনার একটা উপায়।

জয়তী Jatropha integerrima Jacq.

এই কার্জনহলের মাটিও ফাকা নাই। এখানে ওখানে গোলাপি ফুলে ফুলে ভরে থাকে গোলাপি আমরুলে। যখন হয় তখন এমন এক অবস্থা হয় যে পা ফেলাতেও অসুবিধা হয়।

গোলাপি আমরুল Oxalis debilis Kunth.

লালপাতার ভালো নাম পয়েন্সেটিয়া। এটির মূলত ফুল না পাতা গুলোই আকর্ষণীয়। হ্যাঁ, ছবিতে যা দেখতে পাচ্ছেন সেগুলো নতুন পাতা যেগুলো পরবর্তীতে সবুজ হয়ে যাবে।

লালপাতা Euphorbia pulcherrima Willd. ex Klotz

আরো যেটা আনাচে কানাচে পাওয়া যায় সেটা হলো ল্যান্টেনা। এর ফুলের থোকা গুলো এমনভাবে থাকে যেনো কয়েকটা বর্ণের মিশ্রিত এক অবস্থা।

ল্যান্টেনা Lantana camara L.

এইবার চলে আসি একদম শেষ ডিপার্টমেন্ট বায়োকেমিস্ট্রির সামনে। এখানে এক সুন্দর সাদা আর ভিতরে লাল বর্ণের সুন্দর জবা ফুলের গাছ আছে।

জবা Hibiscus rosa-sinensis L.

আর তার পাশেই আছে পার্পেল হার্ট। এর পুরোটাই পার্পেল বর্ণ আর ফুলগুলোও। দূর থেকে দেখলেও একে খুব সহজেই চেনা যায়। এর ফুলগুলো ফুটে থাকলে দেখতে চমৎকার লাগে।

পার্পেল হার্ট  Tradescantia pallida  (Rose) D.R.Hunt

 

আজকের মতো এতটুকুই। আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি সবার সামনে কার্জনহলের  কিছু রত্নদের তুলে ধরার তবুও জানি এটুকু যথেষ্ট না। আর এখানে কিছু ভুল-ভ্রান্তিও থাকতে পারে। আশা রাখবো সেগুলো ধরিয়ে দিয়ে সঠিকটি জানিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করবেন। হয়ত পরবর্তীতে এর থেকেও ভালোভাবে কোনোদিন কেউ এই রত্নদের আপনাদের সামনে তুলে ধরবে। সেই দিনের অপেক্ষায় থাকলাম  …  …   …


রেফারেন্সঃ

  1.  ড. মোঃ আবুল হাসান 2016, পরিচিত ফুলগুলো., আশরাফিয়া বইঘর ঢাকা।
  2. এন.এস. নওরোজ জাহান ২০০৭,বাংলাদেশের ফুলের রাজ্য., বাংলা একাডেমি ঢাকা।
  3.  https://www.researchgate.net/publication/307410433

Special thanks to:
Abulais Shomrat Vai…

Print Friendly, PDF & Email
3.9 13 votes
Article Rating

About Md. Siddiq Hasan

Wants to live in the Nature where every living being is known to me...

Check Also

Samples of Herbarium Sheet

Herbarium: History, Importance & Herbarium Sheet Preparation

Herbarium, a dried plant museum has such importance in taxonomy. It helps a taxonomist identify …

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x